Tuesday 29 January 2013

অগ্নি সাক্ষী 

শৈলেন সাহা 

ভালোবাসার বিশুদ্ধ গোলাপ 
তোমার হাতে দিয়ে ভেবেছিলাম, 
আমার এই প্রেম প্রতীক 
জীবনের নতুন গৌরবে চিরদিন থাকবে 
উজ্জ্বলতার নীরব সাক্ষী হয়ে । 

তোমার ছবি এঁকেছিলাম 
সাদা মলাটের ঘোলাটে জলছবিতে, 
খুঁজতে চেয়েছিলাম আমার 
স্বপ্নবিন্দুর আকাঙ্খাময় অঙ্গীকারকে 
তোমারই অসম্ভব নীরবতায় । 

কিছুই পাই নি সেদিন, 
যখন তুমি গায়ে হলুদের লালপাড় শাড়িতে 
দরজার ফ্রেমে দাঁড়িয়েছিলে মানবীর নব উন্মেষে,
আমার জন্য ইঙ্গিতময় হাসির ঝিলিকে 
পুরোনো স্মৃতির আড়ালে ঢেকেছো নিজেকে, 
এক লহমায় ফুরিয়ে গেছি আমি । 

স্বপ্নালু আবেশে তোমার দিকে তাকিয়ে সেদিন 
কিছুই তো পাই নি আমি, 
শুধু সান্ত্বনায় নিজেকে ভোলানো 
সে যে প্রতীকি দূর্বলতা, 
তারই স্পন্দন বেজেছে বুকের গভীরে । 

তোমার চোখের ইসারায় নতুন ইঙ্গিত সেদিন 
বুঝিয়ে দিয়েছিল 
মিথ্যা এই বুকের পাঁজরের নিচে 
আগুন জ্বালানোর অশুভ প্রচেষ্টা । 
আমার দৃষ্টিহীন চোখ শুধু এটাই বলতে চেয়েছে 
বুকের এই আগুনটুকুই সাক্ষী হয়ে থাক 
তোমার নবজীবনের 
অঙ্গীকারবদ্ধতার নতুন মন্ত্র উচ্চারণের । 

অগ্নি সাক্ষী করেই তো নবজীবনের শুরু, 
তাই বুঝি আমারও . . . । 
















Monday 28 January 2013





বাংলা কবিতা ও তার ইংরাজী ভাবানুবাদ ।

আশ্রয়  
শৈলেন সাহা

রেড লাইটের আলো সবাই দ্যাখে
কিন্তু মনে রাখে কজন ,
তিনটে আলো একটি খাম্বা
অনেক যাত্রী ।
ঝড়ের দাপটে
এক সময়কার ঝাপড়া গাছটা
দুমড়ে মুচড়ে উপড়ে
নিঃশ্বাস বন্ধ, হতাশ আত্মীয়তা
আড়া আড়ি রাস্তার ওপর ।
ট্রাফিকের কষ্টকে পার করে
সবাই দুঃখ প্রকাশ করলো
পাখিদের জন্য
পথিকদের জন্য
এমন কি বাঁশিওয়ালা ওই
ভিখারি ছেলেটার জন্যও ।
কিন্তু যে লতানো গাছটা
ওকে ভালোবেসে ওকে জড়িয়ে
এতদিন বেঁচে ছিল
                                     তার কথা কিন্তু কারও মনে পড়লো না  ।।



Unsung
Sailen Saha

The signaling lone post
At the crossing of the roads
Remained standing
For hours together for years together
At the vicinity of all eyes
But still overlooked by all
Except the burning moment of signals
Red yellow and green
Till it permits to leave

On the day of thunderous storm
Rain rinsed the dust from the leaves
But the madness of the natural calamity
Uprooted the road-side emaciated trees
At the whim of the great prowess
The poor and slim post with signals
Was also not spared
From the spirit of the game
And hence is the result

The signals got blind and roads
Got tangled by the trunks of the trees
Having no guard and guardians
The moving vehicles
Tried to be unruly like the naughty boys
And making chaos all around

Sympathy moved from throat to lips
Voice to voice for the guest birds
For the chaotic traffic for the passers by
Even for the little boy
Who lost the only platform to play the flute
And earn the bread for his blind mother

But the poor creeper stood embracing the post
For years together with love
Enjoying the tallness to touch the sky
Dumped under the silent ruins
Remained unseen unattended
And unsung too.                     









Saturday 22 December 2012

বাংলা কবিতা ও  তার ইংরাজী ভাবানুবাদ

মানুষ দেখে নি কেউ
      শৈলেন সাহা   

এক মুঠো আকাশ ছুঁয়েছিলাম আমি । 
স্বপ্ন দেখতে দেখতে ঘুম ভেঙে 
চাঁদ নয় রুটির থালায় মুখ থুয়েছিলাম আমি । 
মায়ের হাতের মিষ্টি রুটি মুখে নিয়ে 
চিবুকের ভাঁজে ঢেউ তুলে 
কল্পনা করেছিলাম 
রাতে পরীর দেশে উড়ে যাবার । 

জানি না কখন স্বপ্নের মধ্যেই 
থেৎলে গেছে ভাতের সান্‌কি 
গর্জন করা ট্রাকের তলায়, 
যারা ছিল আশেপাশের ঝুপড়িতে 
তাদের গায়ে লেগেছে রক্তের ছোপ 
আর 
ছিটকে গেছে হৃদ্‌পিন্ড বিহীন গলা 
ভিখারী ছেলেটার । 
শেষ চিৎকার শুনেছে সবাই 
মানুষেরা সবাই দেখেছে চেয়ে 
কিন্তু সেই ভীড়ের মধ্যে 
মানুষ দেখে নি কেউ ।। 


Crowd and None
Sailen Saha

Once I touched the sky
And shattered the dream
When I found myself
Biting the dry hand-made bread
As round as the moon

The bread baked by my mother
I chewed under the jaws
And dreamt to be in the
Fairyland of the heaven
A jerk brought me
To the reality of life
When my hand holding
The ill fated depressed aluminum plate
Crushed under the heavy
Wheels of the cruel truck

Blood stained the faces
Of the nearby dwellers
Of the road-side ghettos
Where my mother used to live

People rushed to save the life
And found the oozing heart
Still with reminiscent gasping
Trying to speak the truth
To the men around

But alas! who are they
Where are the men
Only the torn out plate
Flown over the pool of blood  
On the asphalt of the road
With solitude of melancholy
And found the quarreling crowd
Over shadowed each other
With great desperation of                                          
Personified hollowness                                         
And there remains                                            
Only the crowd                                               
And none.                                      
 --------

 

Wednesday 29 August 2012

কান্নার মানে
শৈলেন সাহা

ভালোবাসার উলঙ্গতা আমাকে অবাক করে
নগ্নতার সৌন্দর্য খুঁজতে যাই
অধুনান্তিক নতুন কবিতার ভাষা বিন্যাসে

দুনিয়াদারির পরিবর্তন
আমাকে কাঁপিয়ে দেয় দুনিয়া ডট কমের
কমবেশি ডাল চালের বাজার দর
জানি না পেটের মাপ বেড়েছে নাকি খিদের  
তারও হিসেব রাখি না আজকাল
কেননা বেশি জানার খেসারত অনেক

বুঝতে পারি এখন ভিড় বেড়েছে অনেক বেশি 
তাই আমাকে আমি হারিয়ে ফেলি নিজে নিজেই 
বিন্যস্ততার মায়াজালে  

কথায় কথায় শুধু কথার পাহাড়
ঝরণা হয়ে ঝরতে পারে না বলেই
বরফের পাথর চাপা থাকে বুকের মধ্যে
জমা হয়ে থাকে কান্নার বিন্দু 
চোখ বেয়ে সে নেমে আসতে লজ্জা পায়           
শুধু ভাবতে থাকে একা একাই   
এই কান্নার কোন মানে আছে কি ? 

Friday 10 August 2012



- যমুনা নন্দিনী -
জে-১৯০৩, চিত্তরঞ্জন পার্ক, নতুন দিল্লি - ১১০০১৯
ভারত-বাংলাদেশ  সাহিত্য ও সংস্কৃতির সেতুবন্ধে
রাজধানী দিল্লির পুরোগ প্রতিষ্ঠান ।   
মূল প্রেরণা উৎস - নন্দিনী সাহিত্য ও পাঠচক্র , ঢাকা, বাংলাদেশ ।


গত ৮ জুলাই, ২০১২, ভারতের রাজধানী দিল্লির জে-১৯০৩, চিত্তরঞ্জন পার্ক, ঠিকানায় বসেছিল আরাবল্লী - বাংলা কবিতা চর্চা ও প্রসারের আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় সেদিনের সান্ধ্য অধিবেশন, যেখানে ভারত-বাংলাদেশ সাহিত্য ও সংস্কৃতির সেতুবন্ধে যমুনা নন্দিনী-র আনুষ্ঠানিক শুভ সূচনা ইতিহাসের  এক  নতুন অধ্যায় বলে চিহ্নিত হয়ে রইলো । সভাপতি বিকাশ বিশ্বাস ও সহ-সভাপতি অঞ্জলি সেনগুপ্তের উৎসাহে এই প্রতিষ্ঠান শুধু ভারত-বাংলাদেশ নয় আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলীতে বিশ্বজোড়া সমস্ত মানব সমাজের বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির সকল পৃষ্ঠপোষকদের আহ্বান জানাচ্ছে একসাথে মিলিত প্রচেষ্টায় বাংলা মাতৃভাষাকে জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসনে প্রতিষ্ঠিত করার মৌলিক আগ্রহে । বহির্বঙ্গ বা বাংলার বাইরে থেকে নয় বরং বৃহৎবঙ্গ অর্থাৎ বাংলার বৃহত্তর সীমানায় বাস করে আমাদের পূর্বসূরীদের মহান প্রচেষ্টাকে আরেকটু এগিয়ে নেবার সদিচ্ছাতেই এই আয়োজন । এই সীমানাটা পশ্চিমবঙ্গ বা বাংলাদেশ শুধু নয় বিশ্ববাঙালির বৃহৎবঙ্গ সম্মেলনের আওতায় বাৎসরিক মিলনোৎসব ও পত্রিকা প্রকাশের আয়োজন আমাদের বন্ধুত্বকে  আরো বিস্তৃত করুক এটাই কামনা । এরজন্য যমুনা নন্দিনী সারা পৃথিবীর বাঙালি সমাজের পূর্ণাঙ্গ  সহযোগিতা আশা করে ।         

এই শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের নন্দিনী সাহিত্য ও পাঠচক্র -র প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক সুলতানা রিজিয়া এবং সভাপতি সৈয়দ আলী আহমেদ আজিজ ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত উপস্থিত থাকতে পারেন নি । দিল্লির বহু উৎসাহী কবি সাহিত্যিকদের সাথে উপস্থিত ছিলেন কলকাতার প্রতিনিধি বরুণ চক্রবর্তী, দিলীপ মুখার্জী, সুব্রত দাস এবং ঋতা বসু । সঙ্গীত মুখর সেই কাব্যিক সন্ধ্যায় পূর্ণ সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলীতে যমুনা নন্দিনী-র জন্মলগ্নটি হয়ে উঠেছিল বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি দায়বদ্ধতা প্রকাশের ও নিজস্ব প্রতিশ্রুতি দানের এক মহা-মুহূর্ত । যমুনা নন্দিনী আন্তর্জাতিক স্তরে সারা পৃথিবীর বাংলা ভাষাভাষি মানুষকে নিয়ে সম্মিলিত ভাবে কাজ করার শপথ গ্রহণ করে । সকলকে এক সূত্রে যুক্ত করার আহ্বানে তাঁদের ঠিকানা ও  যোগাযোগের কথা জানিয়ে সেদিনের অনুষ্ঠান শেষ হয় ।     

দপ্তরের ঠিকানা --  শৈলেন সাহা, সাধারণ সম্পাদক , যমুনা নন্দিনী ।  জে-১৯০৩ চিত্তরঞ্জন পার্ক, নতুন দিল্লি - ১১০০১৯, ভারত ।     মোঃ - +৯১ - ৯৮১০৪৪১৯০৩ ,   ইমেল - sailen1903@gmail.com  

Friday 3 August 2012


আত্মিক অনুভব
শৈলেন সাহা


রমন্য রাতের শিরা
সংবেদন অনুভবে কাঁপে
স্থির-বীর্য সৌজন্যবোধের তাপে
দগ্ধ হয় রূপ-রমনীরা

বয়স্য চটুল চিন্তা
বিপন্ন ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য
দাহ্য এই শরীরি প্রদাহে
স্পষ্টত বাতিল সামান্যতা 

সেখানেই পার্থিবতা জানে
আকাঙ্খার আগ্নেয় বিপ্লব কেন
জীবনের প্রান্তিয় সামগ্রীকতা
রুদ্রাক্ষের নিঃসঙ্গতা আনে

জৈবিক আত্মিক বিশীর্ণতা
বিপ্রতীপ দীর্ঘায়ত শ্রমে
রিরংষার শুদ্ধ স্পষ্টতায়
ছিন্নমূল ঐকিকতা কমে

আতন্দ্র স্বকীয় শীতাতপ
রূপ দেয় জীবনের বাস্তবতা যেন
সত্য হয় স্বপ্নময় ঈশ্বরীয় রূপাদর্শ
এবং আত্মিক অনুভব । 

Saturday 28 July 2012


প্রতি পুরুষের প্রতি    
শৈলেন সাহা

শরীর ভরে আগুন ঢেলে দেবে বলেই আমরা আছি
নইলে তোমরা বলবে কাকে
হে বিধাতা, তোমার সৃষ্টি
ব্যাপ্ত করে আকাশ বাতাস জংলা জীবন
তারই মধ্যে কেমন সুখে আজও যেন
আপন মনে নিজে নিজেই
                        পরম সুখে আপনি বাঁচি ।


জীবন ভরে দংশনেরই হাজার জ্বালা
সইবো বলে আমরা আছি
নইলে তোমরাএমন সুখে স্তাবকদলের আশীর্বাদে
সং সাজা এই সংসারেতে
কেমন করে বলবে আজও পরম সুখে
জীবন যাপন মন্ত্র স্মরণ এ সব নিয়ে
                        আজও কেমন সুখেই বাঁচি ।


হৃদয় জুড়ে প্রেমের নামে জটিল খেলা
খেলবে বলেই আমরা আছি 
দুচোখ ভরে স্বপ্নবীজের আশালতা আগামি কাল
নতুন হাওয়ার পেলব চালে দুলতে থাকে
বসন্ত দিন প্রণাম জানায় প্রকৃতিকে
নম্রভাবে প্রেমের সুখে
আশীর্বাদী সবুজ মাঠের চিকণ শোভায়
সেই বিনতি আকাশ ভেজায় বাদল মেঘে
তারই মধ্যে রামধনু রং
                        আছে বলেই আমরা বাঁচি ।


জগৎ জুড়ে এমন খেলায় সঙ্গী হবার ব্রত নিয়েই  
আমরা আছি 
নইলে আজও এমন সুখে দিন যাপনের
ক্রমিক জীবন বংশধরের উদার হাতে
বীর্যবানের স্পর্ধা নেশায় উত্তরিত
কেমন করে ঘটতে পারে দেখার জন্য
অংশীদারী  স্বীকার করেও শত দ্বিধায়
নিষ্পলকে মৌনমুখে আমরা বাঁচি
জগৎ জুড়ে এমন খেলায় সঙ্গী হবার ব্রত নিয়েই 
আমরা আছি ।


শরীর ভরে আগুন ঢেলে দেবে বলেই আমরা আছি
জীবন ভরে দংশনেরই হাজার জ্বালা
সইবো বলে আমরা আছি
হৃদয় জুড়ে প্রেমের নামে জটিল খেলা
খেলবে বলেই আমরা আছি
জগৎ জুড়ে এমন খেলায় সঙ্গী হবার ব্রত নিয়েই 
আমরা বাঁচি ।।